অবশেষে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতিতে যাচ্ছে আন্তনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন। দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পাঠানো অফিসিয়াল চিঠি স্টেশনে পৌঁছায়। আর এ খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান এলাকাবাসী।
আগামী ৩ জুলাই থেকে আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনে দুই মিনিট যাত্রাবিরতি করবে।
এর আগে, বুধবার (১৮ জুন) রেলওয়ের রাজশাহীর মহাব্যবস্থাপকের (পশ্চিম) পক্ষে সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) মো. আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক দপ্তরাদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দুপুরে এ–সংক্রান্ত পত্র আলমডাঙ্গায় পৌঁছানোর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে খুশির জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আলমডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।
ট্রেনের যাত্রাবিরতি আন্দোলনের সমন্বয়ক আলমডাঙ্গা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব হাবিবুল করিম চঞ্চল জানান, আলমডাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের এই যাত্রাবিরতি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সফল আন্দোলন হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলাবাসী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার মিরপুর, মেহেরপুরের গাংনী ও ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর মানুষ এই ট্রেনের যাত্রাবিরতির সুফল পাবেন। সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ৩ জুলাই বেনাপোল এক্সপ্রেসকে বরণ করতে স্টেশনে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে বড় উপজেলা আলমডাঙ্গা। আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের ওপর দিয়ে বর্তমানে সাত জোড়া আন্তনগর, তিন জোড়া মেইল ও দুই জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করে থাকে। ১৮৬২ সালে স্থাপিত এই স্টেশনে এত দিন বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি ছিল না। যে কারণে বিশেষ এই ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করতে যাত্রীদের ১৮ কিলোমিটার দূর চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন অথবা ২২ কিলোমিটার দূরের কুষ্টিয়ার পোড়াদহ স্টেশনে গিয়ে ওঠানামা করতে হতো।
স্কুলশিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অনেকেই দিনের বেলায় চুয়াডাঙ্গা বা পোড়াদহ স্টেশনে যেতেন। তবে ফিরতি পথের যাত্রীদের মধ্যরাত থেকে সকাল হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে বসে থাকতে হয়। এই দাবি পূরণ করে শুধু যাত্রীরাই লাভবান হবে না, বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্বও বাড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচলকারী ৭৯৫/৭৯৬ আন্তনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে নাগরিক কমিটি, বণিক সমিতি, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতি, বৃহত্তর কাপড়পট্টি ব্যবসায়ী সমিতি, মুদি ও মনিহারি ব্যবসায়ী সমিতি, কলেজপাড়া কল্যাণ সমিতিসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, রেলপথ অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পত্র–চালাচালি অব্যাহত রাখা হয়।
বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে রেলপথ মন্ত্রণালয় (প্রশাসন শাখা-৬) থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখাকে লিখিত জানানো হয়।
লিখিত পত্রের মর্মানুযায়ী আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ৭৯৫/৭৯৬ আন্তনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির প্রস্তাবটি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক (ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখা) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মিহরাবুর রশিদ খান পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহীর মহাব্যবস্থাপককে (পশ্চিম) গত ৩ জুন লিখিত অনুরোধ জানান। এরপর ট্রেনের সময়সূচি ও আসন বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়। সে অনুযায়ী বুধবার বন্ধের দিন ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন নিয়মিতভাবে আপ (বেনাপোল-ঢাকা) বেলা ৩টা ৩৯ মিনিটে পৌঁছে ৩টা ৪১ মিনিটে ছেড়ে যাবে এবং ফিরতি পথে ডাউন (ঢাকা-বেনাপোল) রাত ৩টা ৩৪ মিনিটে পৌঁছে ৩টা ৩৬ মিনিটে ছেড়ে যাবে।
সুত্র : দৈনিক প্রথম আলো
এএইচ
রেডিও চুয়াডাঙ্গা ডেস্ক 

























