কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউ রাজনীতিবীদ, কেউবা সরকারি কর্মকর্তা। কেউবা পরিবার-সন্তান নিয়ে জীবনের নানা দায়িত্বে ব্যস্ত। তবু সেই শৈশবের নিখাদ বন্ধুত্ব আর স্কুল জীবনের সরলতা ভুলে যায়নি কেউই।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!প্রায় তিন দশক পর সেই হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে একটিবারের জন্য ফিরিয়ে আনতে তারা ছুটে এসেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে—যেন সময় থমকে দাঁড়িয়েছে স্কুল মাঠে।

বিদ্যালয়ের পরিচিত গেট, টিনশেড ভবন, সেই পুরনো খেলার মাঠ আর অজস্র স্মৃতির ভান্ডার—সবকিছুই যেন হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পেল। কেউ স্কুলের দেয়ালে হাত ছুঁয়ে স্মৃতি হাতড়ালেন, কেউ ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে বললেন, “এই বেঞ্চেই তো ও বসত, আর সামনেরটায় আমি!”
সোমবার (৯ জুন) ঈদুল আযহার তৃতীয় দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী। দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ নেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর একে অপরের সঙ্গে দেখা করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল কোরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত, স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা, উপহার ও শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর একে একে আসতে থাকেন সহপাঠীরা। কেউ কাঁধে করে সন্তান এনেছেন, কেউ হাত ধরে জীবনসঙ্গীকে। সবার চোখে একই রকম উচ্ছ্বাস—পুরনো বন্ধুর দেখা পাওয়া আর শৈশবকে ছুঁয়ে দেখার আনন্দ।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, “শুধু পুনর্মিলনী নয়, এটি এমন উদ্যোগ আগামী প্রজন্মকে শিকড় চিনতে সাহায্য করবে।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা: জেসমিন আরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, “তোরা তো তখন আমার সন্তানের মতো ছিলি, আজ সবাই এত বড় হয়ে গেছে—গর্বে আর আনন্দে চোখ ভিজে আসে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষকরা। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণে অংশ নেন একাধিক প্রাক্তন শিক্ষক—মোশাররফ হোসেন, সোপান মণ্ডল, মাওলানা নুরুদ্দিন, কলিমুদ্দিন, শওকত আলী, সেলিম উদ্দিন এবং লিয়াকত আলী। অনেকেই বলেন, “আমাদের চোখের সামনেই ওরা বড় হয়েছে। আজ ওদের এমন মিলনমেলায় পেয়ে আমরা যেন আবার তরুণ হয়ে উঠেছি।”
এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তনু, থানা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির ও অত্র ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস।

পুনর্মিলনীতে বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহার বিতরণ করা হয় এবং আমন্ত্রিত শিক্ষক ও অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর অনুষ্ঠিত হয় বিদায় পর্ব, বন্ধুদের খেলাধুলা এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর ছিল বিদায় পর্ব, কিন্তু কেউই যেন বিদায় নিতে রাজি নয়। এক বন্ধু বলে উঠলেন, “এই মিলনমেলা যেন থেমে না যায়। বছরে একবার হলেও আমাদের দেখা হওয়া চাই।”
অনুষ্ঠানের আয়োজনে আগে থেকেই ছিল একটি আহ্বায়ক কমিটি। শাফায়েতুর রহমান আহ্বায়ক, আ. হাকিম বিশ্বাস প্রধান সমন্বয়ক, সজীব পারভেজ সদস্য সচিব এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন মো. মতিয়ার রহমান, সাজ্জাদ হোসেন সুজন ও খোরশেদ আলম।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহার বিতরণ করা হয় এবং শিক্ষক-অতিথিদের দেওয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক। পরে সন্ধ্যায় হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যায় ছিল সবার অপেক্ষার সাংস্কৃতিক আয়োজন। গান, কবিতা, স্মৃতিচারণ আর হাসির মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনের একান্ত ভালোবাসার এই আয়োজন।
এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী কাঁপা গলায় বলেন, “আমরা চলে যাচ্ছি, কিন্তু মনে হচ্ছে মন এখানেই রেখে যাচ্ছি।”
কার্পাসডাঙ্গা স্কুলের সেই ঘন্টা, সেই করিডোর, মাঠের ধুলা, প্রিয় বন্ধুদের মুখ—সবই যেন বলে উঠল, “বছর পঁচিশ পেরোলেও, আমাদের বন্ধুত্বটা এখনো সপ্তম পিরিয়ডেই আছে।
এএইচ