০৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত ২৮ তরুণ-তরুণী

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শনিবার (২৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা)। সম্পন্ন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৪ পুরুষ ও ৪ নারী প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।

এসময় নির্বাচিতদের নাম ঘোষণার সময় জেলা পুলিশ লাইন মাঠে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তারা। ফলাফল ঘোষণার পর তাঁদেরকে পুলিশ সদস্য হিসেবে বরণ করে নিয়েছে জেলা পুলিশের সদস্যরা।

চাকরি পেলেন যারা- সাধারণ কোটায় (মেধাতালিকায় পর্যায়ক্রমে) আহসান হাবিব জিসান, ইমরান হোসাইন, রুবায়েত হোসাইন, আসিফ ইকবাল, রাকিবুল ইসলাম, সজিব, রিফাত আলী, আতিক হাসান, আকরাম হোসাইন, জাহিদুল ইসলাম, আরাফাত হোসাইন, মাহাবুদুর রহমান, মেজবাউর রহমান, আশিক আলি, জিহাদ, পারভেজ হোসাইন হিরো।
এছাড়া অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন, লিমন আলি ,ভূপেন শিল, তাওফিক উমর, আকাশ হোসাইন, সাদ্দাম হোসাইন।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (পুরুষ) চাকরি পেলেন, আব্দুল হামিম, আশরাফ আলি থানাবি, রাকিব হোসাইন, শাকিল আলি ও গোলাম সাকলাইন সৌরভ।

পুলিশ পোষ্য কোটায় (পুরুষ) যারা চাকরি পেলেন, মোস্তাফিজুর রহমান শাকিব ও সোহানুর রহমান।

আনসার ও ভিডিপি কোটায় (পুরুষ) পেয়েছেন, নাজিমুস সাকিব।

নারী সাধারণ কোটায় চাকরি পেলেন, খালেদা আক্তার হাসি, সুরাইয়া আক্তার তিশা, কনিকা খাতুন ও জান্নাতুল মিম। এছাড়া অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন, সুরাইয়া আক্তার ও ইতি খাতুন।

মেধাতালিকায় পুরুষের মধ্যে প্রথম হওয়া আহসান হাবিব জিসান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, অনেকে বলতে শুনেছি, সরকারি চাকরির জন্য অনেক টাকা পয়সা লাগে। ভালো লেখাপড়া করলে যে চাকরি পাওয়া যায় তার প্রমাণ পেলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক স্বচ্ছভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে চললে মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে আসতে পারবে। অনলাইনে ১২০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেছিলাম। এ ছাড়া কোনো টাকা লাগেনি। কাউকে দিয়ে সুপারিশও করাতে হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া এক তরুণের দিনমজুর বাবা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়, লোকজন ধরা লাগে। কিন্তু এখন দেখি সব ধারণা ভুল। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো চিন্তাও করি নাই।

সদ্য পুলিশের চাকরি পাওয়া এক তরুণ নাম না প্রকাশের শর্তে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশে চাকরির জন্য আবেদন করি। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করি নাই। এখন হয়তো জীবনের কষ্টগুলো দূর হবে। বাড়তি আর কোন টাকা আমার লাগে নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে মনে হচ্ছে বাবার কষ্ট একটু হলেও দূর করতে পারবো। সব সময় দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১ম ধাপে চাকুরী প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই, শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩০১ জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেন। গত ১৬ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে বাছাইকৃত ৩০১জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্য থেকে পরবর্তীতে ৬৫ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে হতে মেধা,যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৪ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়েসহ মোট ২৮জন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা) বলেন, আমরা খুবই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি নিয়োগ প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত শতভাগ ন্যায়, নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি, এটা আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সকলের একমাত্র পূর্ব শর্ত ছিলো মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। তাদের অন্য কোনো পরিচয়, সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থান ভূমিকা পালন করেনি। সরকার কতৃর্ক নির্ধরিত ১২০ টাকা তাঁদের সরকারি খরচ ছিলো। জেলা পুলিশ সকল বিষয়ে খুবই তৎপর ছিলো।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ কামরুল আহসান, মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় মনোমালিন্য, অত:পর…

চুয়াডাঙ্গায় ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত ২৮ তরুণ-তরুণী

প্রকাশের সময় : ১২:৪০:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শনিবার (২৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা)। সম্পন্ন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৪ পুরুষ ও ৪ নারী প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।

এসময় নির্বাচিতদের নাম ঘোষণার সময় জেলা পুলিশ লাইন মাঠে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তারা। ফলাফল ঘোষণার পর তাঁদেরকে পুলিশ সদস্য হিসেবে বরণ করে নিয়েছে জেলা পুলিশের সদস্যরা।

চাকরি পেলেন যারা- সাধারণ কোটায় (মেধাতালিকায় পর্যায়ক্রমে) আহসান হাবিব জিসান, ইমরান হোসাইন, রুবায়েত হোসাইন, আসিফ ইকবাল, রাকিবুল ইসলাম, সজিব, রিফাত আলী, আতিক হাসান, আকরাম হোসাইন, জাহিদুল ইসলাম, আরাফাত হোসাইন, মাহাবুদুর রহমান, মেজবাউর রহমান, আশিক আলি, জিহাদ, পারভেজ হোসাইন হিরো।
এছাড়া অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন, লিমন আলি ,ভূপেন শিল, তাওফিক উমর, আকাশ হোসাইন, সাদ্দাম হোসাইন।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (পুরুষ) চাকরি পেলেন, আব্দুল হামিম, আশরাফ আলি থানাবি, রাকিব হোসাইন, শাকিল আলি ও গোলাম সাকলাইন সৌরভ।

পুলিশ পোষ্য কোটায় (পুরুষ) যারা চাকরি পেলেন, মোস্তাফিজুর রহমান শাকিব ও সোহানুর রহমান।

আনসার ও ভিডিপি কোটায় (পুরুষ) পেয়েছেন, নাজিমুস সাকিব।

নারী সাধারণ কোটায় চাকরি পেলেন, খালেদা আক্তার হাসি, সুরাইয়া আক্তার তিশা, কনিকা খাতুন ও জান্নাতুল মিম। এছাড়া অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন, সুরাইয়া আক্তার ও ইতি খাতুন।

মেধাতালিকায় পুরুষের মধ্যে প্রথম হওয়া আহসান হাবিব জিসান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, অনেকে বলতে শুনেছি, সরকারি চাকরির জন্য অনেক টাকা পয়সা লাগে। ভালো লেখাপড়া করলে যে চাকরি পাওয়া যায় তার প্রমাণ পেলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক স্বচ্ছভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে চললে মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে আসতে পারবে। অনলাইনে ১২০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেছিলাম। এ ছাড়া কোনো টাকা লাগেনি। কাউকে দিয়ে সুপারিশও করাতে হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া এক তরুণের দিনমজুর বাবা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়, লোকজন ধরা লাগে। কিন্তু এখন দেখি সব ধারণা ভুল। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো চিন্তাও করি নাই।

সদ্য পুলিশের চাকরি পাওয়া এক তরুণ নাম না প্রকাশের শর্তে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশে চাকরির জন্য আবেদন করি। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করি নাই। এখন হয়তো জীবনের কষ্টগুলো দূর হবে। বাড়তি আর কোন টাকা আমার লাগে নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে মনে হচ্ছে বাবার কষ্ট একটু হলেও দূর করতে পারবো। সব সময় দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১ম ধাপে চাকুরী প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই, শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩০১ জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেন। গত ১৬ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে বাছাইকৃত ৩০১জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্য থেকে পরবর্তীতে ৬৫ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে হতে মেধা,যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৪ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়েসহ মোট ২৮জন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা) বলেন, আমরা খুবই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি নিয়োগ প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত শতভাগ ন্যায়, নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি, এটা আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সকলের একমাত্র পূর্ব শর্ত ছিলো মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। তাদের অন্য কোনো পরিচয়, সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থান ভূমিকা পালন করেনি। সরকার কতৃর্ক নির্ধরিত ১২০ টাকা তাঁদের সরকারি খরচ ছিলো। জেলা পুলিশ সকল বিষয়ে খুবই তৎপর ছিলো।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ কামরুল আহসান, মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।