বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার (২৫ মে) দুপুর বা বিকেলের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর সেটি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে এটি আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গতকাল সকালে নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা জানানো হয়। এ জন্য দেশের তিন সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়। মাছ ধরার যানগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। এই নিম্নচাপ যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে এর নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি ওমানের দেওয়া, এর অর্থ ‘বালু’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ আজ সকালে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি আজ দুপুর বা বিকেলের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সেটি কাল রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আর এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বজলুর রশিদ আরও বলেন, ‘রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এটি আঘাত হানতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি এলাকা ধরে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তখন সেটিকে ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা এর বেশি হলে তা হয় ‘সুপার সাইক্লোন’।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের বা সামনের অংশের প্রভাব কাল সকাল থেকেই বোঝা যাবে বলে গতকাল জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। রোববার থেকে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের (আইডব্লিউএফএম) অধ্যাপক এ কে সাইফুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে উপকূলের অনেক বড় এলাকাজুড়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ারও আশঙ্কা আছে।
এ কে সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূল রেমালের সম্ভাব্য আঘাতস্থল। তবে দেশের সর্বত্রই এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। সেই প্রভাব বোঝা যাবে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কতটুকু—এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাব্য সময় রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এ সময় ভাটা চলবে। তাই এ সময় আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কম। তবে রাত ১২টা বা এর পরে আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
গভীর নিম্নচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে যেতে বারণ করা হয়েছে।
এএইচ